শেয়ার বাজার কি সামাজিক সুরক্ষাও বটে?

আমরা সকলেই জানি, ১৯৯০ সালের পর থেকে উদারনীতির ব্যাপকতার ফলে, নিশ্চিত উপার্জন, পেনশন ও এমনবিধ অন্যান্য সামাজিক প্রকল্পগুলির সুযোগ-সুবিধা ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে, তার জায়গায় মাথা তুলেছে শেয়ার বাজার ভিত্তিক বিনিয়োগ। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কোনও মানুষ যদি তাঁর ভবিষ্যতের দিকে তাকান, তিনি বুঝতেই পারেন, অতীতের মতো নিশ্চিন্ত সরকারি সামাজিক সুরক্ষা বলয় আর নেই। কেউ চাইলে, এই পরিস্থিতি থেকে এই মুহূর্তে বেরনোরও কোনও রাস্তা নেই। হয়তো, বহু মানুষই আজও এর সঙ্গে ঠিক মানিয়ে নিতে পারেননি। কিন্তু বাস্তবতা হল, সরকারি ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে আজ যা সুদের হার, তাতে মুদ্রাস্ফীতিকে ছাপিয়ে উঠে দিন গুজরান করা সত্যিই বেশ কষ্টকর। তাহলে উপায়?

ঘটনা হল, আজ পেনশন, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও অন্যান্য বিনিয়োগ সবই প্রায় শেয়ার বাজার নির্ভর। অতীতে আমাদের বার্ধক্যের সময় ছিল কিছুটা কম। তাছাড়া পুরো সমাজব্যবস্থার বৃহৎ অংশই ছিল কৃষি-নির্ভর। তাই, যৌথ পরিবার থাকার কারণে জীবনের শেষ দিনগুলিতে কোনও বয়স্ক মানুষের আর্থিক দায়ও পরিবারই বহন করতে সক্ষম ছিল। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজে মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ায় এবং অণু পরিবার গড়ে ওঠার কারণে বয়স্ক মানুষদের সমস্যা এখন অনেকটাই বেশি। তাছাড়া পেশাগত কারণে বহু ছেলেমেয়েই তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতে পারেন না। তারা চাইলেও, বহু সময়েই সঠিক ভাবে বয়স্ক আপনজনদের পাশে দাঁড়াতে পারেন না। এই সমস্যা যে শুধু ভারতবর্ষে দেখা দিয়েছে, তা নয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও বহু অঞ্চলেই জনসংখ্যার বৃদ্ধি হয় স্থির হয়ে রয়েছে অথবা হ্রাস পাচ্ছে; এবং যেটা সব থেকে বড় সমস্যা তা হল, উক্ত দেশগুলিতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধি। এই মানুষগুলোর একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে সেরকম উপার্জন থাকে না। সঞ্চিত অর্থই তাদের একমাত্র সম্বল। তাই বয়স্ক মানুষজনের ভরণপোষণ ও জীবনযাপনের সমস্যা ধীরে ধীরে জাতীয় সমস্যার রূপ নিচ্ছে। ভারতের মতো দেশে যেহেতু অধিকাংশ মানুষের আয় খুব উচ্চমানের নয়, তাই সঞ্চিত অর্থের উপর নির্ভর করে জীবন অতিবাহিত করা অনেকের কাছেই বেশ দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!