ব্যক্তি জীবনে বাউণ্ডুলে ও প্রতিভাবান সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর বিখ্যাত ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসের শুরুতেই একটি মহাসত্যের কথা উল্লেখ করেছিলেন। ভ্রমণ করা আর তা প্রকাশ করা এক জিনিস নয়। একটা পায়ের কাজ, অন্যটা হাতের; যার পা আছে সেই ভ্রমণ করতে পারে, কিন্তু দুটো হাত থাকলেই লেখা যায় না। ভ্রমণ এবং ভ্রমণ-সাহিত্য দুটোই বিষয় হিসেবে আমার কাছে আকর্ষণীয়। কিন্তু, লিখতে বসে শরৎচন্দ্রের উক্তিটির মর্ম হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
অবশ্য, বাংলা ভাষায় জনপ্রিয় ভ্রমণ-সাহিত্যের দিকে তাকালে খানিক ভরসা পাওয়া যায়। সেখানে রয়েছে বিস্তর স্বাধীনতা। এমনকি ভ্রমণ না করেও লেখা হয়েছে ভ্রমণ-সাহিত্য। সেই তালিকায় রয়েছেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো কালজয়ী সাহিত্যিক। বিভূতিভূষণের পায়ে পায়ে ভ্রমণের অসামান্য ফসল যেমন ‘আরণ্যক’, তেমনি কল্প-ভ্রমণের ফসল ‘চাঁদের পাহাড়’। কিন্তু, এ নিয়ে অভিযোগের উপায় নেই। বিভূতিভূষণের সাহিত্যের সব না হোক, অনেকটাই তো আসলে ‘পথের পাঁচালি’। কাছের এবং দূরের। কখনও গ্রাম থেকে শহরে। কখনও উঁকিঝুঁকি, এ পাড়া ও পাড়ার অলিতে গলিতে। আরও দূরের টান ছিল, কিন্তু সাধ্য ছিল না। ফলে, সেই বামনের চন্দ্রস্পর্শাভিলাষের মতো এই ভ্রমণপ্রিয় সাহিত্যিকের সাহিত্যে ঠাই করে নিয়েছিল মানস-ভ্রমণ। ভ্রমণলোলুপ বাঙালি সেই সাহিত্যকেও অকুণ্ঠ চিত্তে গ্রহণ করেছে। আমরা সবাই জানি যে সমরেশ বসুও কালকূট ছদ্মনামটি তৈরিই করেছিলেন বাঙালির ভ্রমণ সাহিত্যের আবদার মেটাতে।