পরিশীলিত মানবতার সমাজতন্ত্র

রাজনৈতিক অর্থনীতির ক্রমপরিবর্তন সামাজিক বিবর্তনের নিয়ামকস্বরূপ। তাই ইতিহাস, সমাজ ও দার্শনিক বীক্ষা একই অঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পরস্পরের সঙ্গে। ইতিমধ্যে নানারকমের সমাজব্যবস্থা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি— দাস-মালিক ও দাস, সামন্তপ্রভু ও প্রজাবৃন্দ, শিল্প-মালিক ও শ্রমিক। এ সম্পর্কে কার্ল মার্কস’এর বিখ্যাত উক্তি, ‘History of all hitherto existing societies is the history of class struggle.’। অর্থাৎ, শোষণযন্ত্রের আঙ্গিকের পরিবর্তন হয়। শোষণযন্ত্র থেকে যায় নানা আঙ্গিকে। এই শোষণযন্ত্র ও শাসকের পরিবর্তন রাজনৈতিক অর্থনীতিরও রূপান্তর ঘটিয়ে চলে। বিশেষ করে পুঁজিবাদী সমাজে চারটি শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে সঙ্গেই গত শতকের নব্বইয়ের দশকে আসে বিশ্বায়ন যার প্রচণ্ড গতিবেগ গত ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর ধরে আমরা প্রত্যক্ষ করে চলেছি। যথার্থই আজকের পৃথিবী এক অত্যাশ্চর্য পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি সব কিছুরই আঙ্গিকগত পালাবদল ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। শোষণ আছে তবে কাজের প্রকৃতি পাল্টে গিয়েছে। কর্মক্ষেত্রের চাপ পাল্টাচ্ছে। নিয়োগ কমেছে, যন্ত্র কর্মসংকোচন করে চলেছে। রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রম-উন্নয়ন হয়ে চলেছে। ক্রমোন্নত প্রযুক্তি বিস্ময়কর এক যন্ত্রময়তার ইন্দ্রজালে আমাদের জীবনযাপনকেও পাল্টে চলেছে প্রতিনিয়ত। প্রগতি, উন্নয়ন, সমাজতন্ত্রের ভাবনারও এক আদিকল্প রূপান্তর ঘটেছে। তাই আজ আর শুধু বিশ্লেষণ নয়, নতুন ভাবনার পরিসর দাবি করছে সচেতন সমাজমনস্ক মন। প্রয়োজন এক নতুন উন্নত পরিশীলিত মানবতার সমাজতন্ত্র, যা পুরনো ধাঁচের সমাজতান্ত্রিক ভাবনার মারাত্মক ত্রুটিগুলি সংশোধন করতে বদ্ধপরিকর।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *