শেয়ার বাজার থেকে সামাজিক মালিকানা!

একটি বেয়ারা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা যাক। শেয়ার বাজারের উত্থান কি ব্যক্তিগত মালিকানা থেকে সামাজিক মালিকানায় রূপান্তর? প্রশ্নটি আমার মস্তিষ্ক উদগত নয়। মার্কস সাহেব তাঁর ‘ক্যাপিটাল’ (খণ্ড ৩) গ্রন্থে এমন একটি দাবি করেছেন। তিনি স্পষ্টত বলছেন,

১) স্টক মার্কেটের উদ্ভবের কারণে উৎপাদনের পরিধিতে যে বিপুল সম্প্রসারণ হয়েছে তা ব্যক্তি পুঁজিবাদীদের পক্ষে ঘটানো সম্ভবপর ছিল না;

২) কারণ, পুঁজি যেহেতু এমন এক সামাজিক উৎপাদন প্রণালীর ওপর দাঁড়িয়ে থাকে যেখানে উৎপাদিকা শক্তি ও শ্রমশক্তির সামাজিক পুঞ্জীভবন ঘটে, ফলে তা সামাজিক পুঁজির রূপ গ্রহণ করে। একে বলা যায়, পুঁজিবাদী উৎপাদন কাঠামোর মধ্যেই ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে পুঁজির অবসান;

৩) পুঁজিপতিরা আদতে হয়ে দাঁড়াচ্ছে অন্যের ও নিজের সম্মিলিত পুঁজির ম্যানেজার মাত্র।

মার্কস আরও বলছেন, এ হল পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার মধ্যেই পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার বিলোপ; অস্যার্থ, উপর উপর দেখলে, এক নতুন উৎপাদন বিন্যাসে রূপান্তর, যা এক নতুন আর্থিক স্বৈরাচারের জন্ম দেয়, এক গুচ্ছ নতুন পরজীবী তৈরি করে, যেমন, প্রোমোটার, ফাটকাবাজ ও নামমাত্র ডিরেক্টর। মার্কস’এর ভাষায়, ‘এ হল ব্যক্তিগত সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণমুক্ত ব্যক্তিগত উৎপাদন।’

আমরা যদি উপরোক্ত এই ব্যাখ্যা থেকে শুরু করি, তাহলে অর্থনীতি ভাবনার খানিক গোড়া থেকে আমাদের রওনা হতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, মার্কসবাদের নামে যতই সোরগোল তোলা হোক না কেন, আসলে মার্কস সাহেবও শুরু করেছিলেন মূল্য ভাবনা বা মূল্য তত্ত্বের একেবারে আদি থেকে। সে অর্থে তিনি তাঁর সময়ের পুঁজিবাদী আবহের মধ্যে প্রবহমান মূল্য তত্ত্বকে উন্মোচিত করেছিলেন যথার্থ ভাবে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পরে প্রায় ১৪০ বছর অতিক্রান্ত হতে চলল। তাই, তাঁর ভাবনার মধ্যে যে রসায়ন বিদ্যমান, তাকে বোঝার চেষ্টার পাশাপাশি আজকের নতুন সময়ের পরিবর্তনগুলিকেও আত্মস্থ করতে হবে। কারণ, তাঁর ভাবনার যোগসুত্রটি যেহেতু মূল্য তত্ত্ব, যা তিনি তাঁর পূর্বসূরীদের থেকে সংগ্রহ করে তাকে সময়ের অনুরণনে বেঁধেছিলেন। অতএব সোজা কথায়, আজকের সময়ে শেয়ার বাজারকে বুঝতে হলে, সংক্ষেপে হলেও, মূল্য তত্ত্বের আলোচনাকে বাদ দিয়ে এগোনো যাবে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!